আলুর কথকতা
কৃষিবিদ এ এইচ ইকবাল আহমেদ*
নিত্য যারে লাগে আর বেশ দরকার
বলুনতো তার নাম, ওর পরিবার
সোলানেসি। তবে নয়, টমেটো বেগুন
বা ঝাল মিষ্টি মরিচ। উত্তর শুনুন-
কেউ বলে গোল আলু কেউ বলে আলু
পলি মাটি তার প্রিয়, মেশা যাতে বালু।
রবি খন্দে জন্মে নেয়। হিমাগারে রেখে
সারাবর্ষে তারে পাই অতি কাছ থেকে।
বৃদ্ধিকালে আলু দেহ সূর্যালোক পেলে
সবুজ- বিষাক্ত হয়, দেয়া লাগে ফেলে।
পাটের মতোন আলু অর্থকরী পণ্য
জোগায় নগদ অর্থ কৃষকের জন্য।
ধান , গম তারপরে আসে নাম তার
যা দিয়ে তৈয়ার হয় বিচিত্র খাবার।
সিঙাড়া, আলুরদম, প্রিয় নয় কার!
শুধু পোড়া আলু কিংবা সিদ্ধও মজার।
পান্তা বা গরম ভাতে তার সাথে মিলে
হাতের নাগালে সস্তা, রুচি যোগ দিলে
আলু ভর্তা, ভাজি। মাংশ কিংবা মাছে
সহজে মানিয়ে নিতে আর কি বা আছে!
নোনা কিংবা ঝাল হলে আলু কয়েকটা
ছেড়ে দিলে ঝোলে তার, স্বাদু হয় ওটা।
পুড়ে গেলে চামড়ায় আলু পেষা দিলে
ওতে পরম আরাম ক্ষণকালে মিলে।
ফ্রেন্স ফ্রাই, পাউরুটি, চিপস বা চপ
পুষ্টি- রুচি বৃদ্ধি করে খেলে টপা টপ।
বিশ্বজুড়ে আছে তার ভীষণ কদর
পশুখাদ্য হিসেবেও চাহিদা জবর।
পুষ্টিবিদ বলেছেন; খোসাসহ আলু
সিদ্ধ হলে বেড়ে যায় পুষ্টি আর ভ্যালু।
আলু খেলে ভুড়ি হয়, এটা সত্য নয়
ডায়াবেটিকে আলুর খাদ্যে নাই ভয়।
খাদ্য, ওষুধ, কোহল, প্রসাধনে আর
কত শত রকমারি ব্যবহার তার;
জ্বালানি খাবার ছাড়া নানাবিধ পণ্য
আলু থেকে তৈরি হয়, তালিকা অগণ্য।
আদি ভূমি আন্দিজে। সে পর্বত থেকে
নাবিকেরা ইউরোপে নিয়ে আসে একে।
আইরিশ পটেটোর পরিচয় নিয়ে
ছড়ায় বিভিন্ন নামে দেশে দেশে গিয়ে।
আয়ারল্যান্ডে এককালে মড়কের ফলে
অধিকাংশ আলু ক্ষেত যায় রসাতলে।
ইতিহাসে ‘আইরিশ পটেটো ফেমিন’
স্মরণীয় কাল দাগে, বিষাদে মলিন।
আধেক মরেছে দেশে; ভেগে দেশান্তরে
আমেরিকা ও অন্যত্র বাড়িঘর গড়ে
আইরিশ শরণার্থী, নামিদামি জন
কতেক ইউএসের প্রেসিডেন্ট হন।
বেশি হয় আলু বিশ্বে চীন ও ভারতে।
এশিয়ায় তৃতীয় ও সপ্তম জগতে
আমাদের স্থান। তবে, মাথাপিছু তার
অনেক দেশের পিছে রয় তালিকার।
মৌসুমে শ্রমিক, ক্ষেতি, ব্যবসায়ী কত
ব্যস্ত রয় তারে নিয়ে সবে অবিরত।
এখন দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিদেশে
আলুর চালানে ব্যাংক ভরে তোলে ক্যাশে।
ভেনগগ এঁকেছেন ‘আলু খায়’ ছবি*
এর চাষ করেছেন আমাদের রবি।**
আলুর প্রসঙ্গ নিয়ে এবারের তরে
যবনিকা পাত করি বাকি কথা পরে ।।
* ‘দি পটেটো ইটারস’- ভেনগগ।
** ‘আমার বাবা রবীন্দ্রনাথ’- রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
*পরিচালক (অব.), বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, সেল ০১৫৫৮৩০১৯০৮ <ahiqbal.ahmed@yahoo.com>